মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫

সিটি করপরেশনের ছোট-বড় চোর ধোরতে প্রযুক্তির ব্যবহার

কোনোভাবেই যখন জ্বালানি তেল চুরি ও গাড়িগুলোর অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তখন প্রয়োজন পড়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহারের। তাই এবার প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ কে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে ডিএনসিসি শুরু করতে যাচ্ছে ভিটিএস বা ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম।
ট্রিপ না দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া, ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ২০ কিলোমিটার দেখানো বা গাড়ি ফেলে বাসায় ঘুমিয়ে কাটানোর প্রবণতা। অসাধু চালকদের এ রকম নানা কূটকৌশলে পেরে উঠছিল না কর্তৃপক্ষ। তাই চলতি মাসের মধ্যেই মেয়র থেকে শুরু করে ডিএনসিসির ২০৮টি গাড়িতে লাগানো হচ্ছে ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস) নামক একটি ছোট্ট যন্ত্র। যানবাহনের এমন একটি স্থানে ভিটিএস সংযোজন করা হবে, চালক নিজেও তা জানতে পারবেন না। এ সিস্টেমের মাধ্যমে একটি গাড়ি কখন কোথায় আছে, সারা দিনে কোথায় কোথায় চলাচল করেছে, কত কিলোমিটার পথ চলেছে, কী পরিমাণ জ্বালানি পুড়েছে তার সবকিছু সর্বক্ষণ মনিটর করা যাবে। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে গাড়িগুলোর প্রতি মাসের চলাচল-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও প্রিন্টের মাধ্যমে দেখা যাবে।
ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক সমকালকে বলেন, জ্বালানি ব্যয় কমাতে শিগগিরই তারা গাড়িতে ভিটিএস সংযোজন করতে যাচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত অনেক কাজও এরই মধ্যে সেরে ফেলেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এ মাসের মধ্যেই গাড়িগুলোতে ভিটিএস যুক্ত হতে পারে। এতে জ্বালানি চুরিও বন্ধ হবে। কেউ কাজেও ফাঁকি দিতে পারবে না।
ডিএনসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মাহবুবুর রহমান সমকালকে জানান, ভিটিএস লাগালে প্রতি মাসে ডিএনসিসির এক লাখ টাকার মতো বাড়তি খরচ হবে। কিন্তু উপযোগিতা পাওয়া যাবে কোটি টাকার সমান। চলমান ২০৮টি গাড়িতেই ভিটিএস লাগানো হবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভিটিএস সংযোজনের বিষয়ে ডিএনসিসির আলোচনা করে ডিএনসিসি। মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি বলেছে, তারা প্রতিটি গাড়িতে সাত হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ে ভিটিএস সংযোজন করে দিতে পারবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে গাড়িপ্রতি দিতে হবে ৫৫০ টাকা। গ্রামীণফোন ভিটিএস সংযোজনে চায় আট হাজার ৮০০ টাকা। মাসিক খরচ ৬৭২ টাকা। আর নিটল মোটরস চায় নয় হাজার ৫০০ টাকা ও গাড়িপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ভিটিএসের দুই বছরের ওয়ারেন্টি দেবে। এ সময়ে সার্বিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বও তারাই পালন করবে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিটিএস সংযোজন করা প্রতিটি গাড়ির প্রতিমুহূর্তের তথ্য যে কোনো স্থানে বসেই জানা যাবে। পরে রবিকে চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে রবিকে কাজ দেওয়ার জন্য মেয়রের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
ভিটিএসের সুবিধা :ভিটিএস সংযোজনের মাধ্যমে গাড়িগুলোর গতি ও এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে। নির্ধারিত গতি ও এলাকা অতিক্রম করলেই সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কাছে মেসেজ পেঁৗছাবে। ওই গাড়ির আশপাশের গাড়িগুলোর তথ্যও পাওয়া যাবে। গাড়িটি চুরি হয়ে গেলে কেন্দ্র থেকেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেওয়া যাবে। গাড়ির সার্বক্ষণিক অবস্থানও জানা যাবে। ইঞ্জিনের মান সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারবে ভিটিএস। কী পরিমাণ জ্বালানি পুড়ল, সে তথ্যও পাওয়া যাবে।
ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, প্রতি মাসে দুই থেকে তিন কোটি টাকার জ্বালানি খরচ করা হলেও ওই জ্বালানিতে যে পরিমাণ রাস্তা চলার কথা, ডিএনসিসির গাড়িগুলো ওই পরিমাণ রাস্তা অতিক্রম করে না। অনেক সময় কর্মকর্তারা গাড়িগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন বা ঢাকার বাইরে অবকাশ যাপনে নিয়ে যান। অনেক চালক গাড়ি নিয়ে বাণিজ্যিক ট্রিপও দেন। আর বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো দুই ট্রিপ দিয়ে তিন-চার ট্রিপের কথা উল্লেখ করে।
 অনেক সময় ট্রিপ না দিয়ে জ্বালানির কুপন তুলে বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার কাহিনীও নতুন নয়। এসব কারণে রাজধানীর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমেরও তেমন উন্নতি হচ্ছে না। এসব অনিয়ম রোধে ডিএনসিসি কয়েকজন চালককে সাময়িক বরখাস্তও করেছে। তার পরও আশানুরূপ ফল মেলেনি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ভিটিএসই এসব অনিয়ম প্রতিরোধের সর্বোত্তম সমাধান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন