মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫

বাল্যবিয়ের কারনে অনেকেই শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ছে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার আগেই

২রা নভেম্বর'১৫ তারিখ অর্থাৎ রোববার থেকে সারা দেশব্যাপী শুরু হয়েছে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। এইবছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে মোট ২৩,২৫,৯৩৩ জন যারমধ্যে ১,৩৩,৫৬৯ জন অনিয়মিত অর্থাৎ নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২১,৯২,৯৩৫ জন । অথচ ২০১২ সালের প্রাথমিক সমাপনী ও এবতেদায়ী পাস করে ২৬,৭০,৯৩৫ জন শিক্ষার্থী যাদের সকলের এইবার ২০১৫ সালে জেএসসি ও জেডিসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। কিন্তু আসলে অংশগ্রহণ করছে প্রায় ৪.৭৯ লক্ষ শিক্ষার্থী কম অর্থাৎ এদের সকলেই ঝরে পড়েছে।
কিছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই সংখ্যাটা কি স্বাভাবিক? তাহলে এতগুলো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারন টা কি হতে পারে তার সন্ধানে পাওয়া গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য, বাল্যবিবাহ। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের মাত্রা এখনও অনেক বেশি।

এখানে দেখুন শুধু টাঙ্গাইলের বাল্যবিয়ের অবস্থাঃ-
২ তারিখে শুরু  হওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রে অনুপস্থিত রয়েছে ৮২ ছাত্রী। এদের মধ্যে অধিকাংশই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুপস্থিত ছাত্রীদের মধ্যে ৬৬ জন জেএসসি, ১৬ জন জেডিসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। অনুপস্থিতির কারণ জানতে গিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও পাঁচটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তারা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে দুই/একজন ঝরে পড়া ছাড়া অধিকাংশই বাল্যবিয়ের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। আবার অনেকে স্বামীর সংসার থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

এ বছর মির্জাপুর উপজেলার ভারতেশ্বরী হোমসসহ ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাঁচ হাজার ৮৩১জন এবং ১৪টি মাদ্রাসা থেকে ৪৬৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল। নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজার ৪৬৬ জন ছাত্রী এবং তিন হাজার ২৯২ জন ছাত্র রয়েছে। এদের মধ্যে ৮২ জন ছাত্রী এবং ৪৫ জন ছাত্র অনুপস্থিত রয়েছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এ উপজেলার বাঁশতৈল মনসুর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, সদরের সদয় কৃষ্ণ মেডল উচ্চ বিদ্যালয় ও আফাজ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা, জামুর্কী উচ্চ বিদ্যালয় ও ক্যাডেট কলেজ এর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাঁশতৈল মনসুর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন সোমবার ছাত্রী ১৪ জন ও ছাত্র ১২ জন অনুপস্থিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন সোমবার পাঁচটি কেন্দ্রে একই রকম অনুপস্থিত রয়েছে বলে শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন।

সদরের মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, ৩১৮ জন ছাত্রী জেএসসি পরীক্ষায় নিবন্ধন করেছিল। এদের মধ্যে ৩০৬ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বাকি ১২ জন ছাত্রীর প্রবেশ পত্র বিদ্যালয়ে রয়েছে। ১২ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছেন। ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিচ্ছেন। তারপরও শিক্ষাজীবন থেকে অনেক সম্ভাবনাময় ছাত্রী এভাবে ঝরে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এলাকার শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে বলেও উল্লেখ্য করেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন